আবারো সংশোধন হবে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০

Posted on
Advertisement
Reading Time: 3 minutes

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় শিক্ষানীতি সংশোধন বা রূপান্তর করা হবে। তাঁর মন্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য হবে শিক্ষাকে সার্বিক শিক্ষায় পরিনত করা, যেখানে শিক্ষার্থীরা যে কোন স্ট্রিমের শিক্ষার সময় সম্পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। তাছাড়া, মাদরাসার শিক্ষার্থীদেরও প্রয়োজনীয় জীবন সম্পর্কিত দক্ষতা সরবরাহ করা হবে যাতে তারা ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে না থাকেন। এই লক্ষ্যে, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় শিক্ষানীতি পরিবর্তন বা রূপান্তরের আলোচনা হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

এছাড়াও, সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘স্মার্ট এডুকেশন ফেস্টিভ্যাল‘, যেখানে শিক্ষা উপমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, যাঁরা জানান যে, ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নতুন শিক্ষাক্রম পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে (দশম শ্রেণি পর্যন্ত) এবং ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে থেকে শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, যাঁরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান সহ অনেকেই।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০

শিক্ষানীতি ২০১০ নিয়ে মাননীয়  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্যঃ  একটা জাতির উন্নতির চাবিকাঠি হল শিক্ষা। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য পূরণে শিক্ষাই হচ্ছে প্রধান অবলম্বন। মেধা ও মননে আধুনিক এবং চিন্তা- চেতনায় প্রামসর একটি সুশিক্ষিত জাতিই একটি দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। তাই শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড।

আওয়ামী লীগ আগামী প্রজন্মকে নৈতিক মূল্যবোধ , জাতীয় ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধকরে জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়নের প্রস্তুতি পূর্বেই গ্রহণ করেছিল। আমাদের দেশের জনগণের ভাগ্য বিপর্যয়ের জন্য আমার ভীষণ দুঃখ ও কষ্ট হয়। স্বাধীনতার পর ঊনচল্লিশ বছর পার হয়ে গেলেও কোন শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হয়নি। স্বাধীনতার পরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের

উদ্যোগে একটি শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ কুদরাত এ খুদার নেতৃত্বে দেশের প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছিল। উক্ত কমিশন ব্যাপক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে গণমুখী আধুনিক এবং বিজ্ঞানভিত্তিক একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে। 

১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যা করার মধ্য দিয়ে অবৈধ ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয় । ফলে ড কুদরাত এ খুদা প্রণীত শিক্ষানীতি আর বাস্তবায়িত হয়নি । বরং জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয় , মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরনে কোন পদক্ষেপই নেয়া হয়নি । ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একুশ বছর পর ক্ষমতায় এসে পুনরায় শিক্ষানীতি প্রণয়নে পদক্ষেপ নেয় । ১৯৯৭ সালে রিপোর্ট প্রস্তুত করা হয় । উক্ত প্রতিবেদনের আলোকে ‘শিক্ষানীতি -২০০০ প্রণীত হয় । 

কিন্তু ক্ষমতার পট পরিবর্তন হওয়ায় আবারও শিক্ষানীতি ফেলে দেয়া হয় আস্তাকুঁড়ে । ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে আমরা সরকারের দায়িত্ব নেবার পর নির্ধারিত লক্ষ্যকে সামনে রেখে পূর্বে প্রণীত শিক্ষানীতিকে যুগোপযোগী করে প্রণয়ন করার জন্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের দায়িত্ব প্রদান করা হয় এবং সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের মতামত গ্রহণ করা হয় । সকলের মতামতকে গুরুত্ব দেয়ার কারণে এই শিক্ষানীতি সর্বমহলে গ্রহণযোগ্যতা পায় ।

এভাবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আমরা একটা শিক্ষানীতি পেলাম । এই শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি । আমরা জানি যে কোন বিষয়ে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে হলে সঠিক নীতিমালা প্রয়োজন ।

নির্বাচনী ইশতেহার ২০২৪ 

আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার -২০০৮ এ আমরা সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশকে একটি পারিদ্রমুক্ত , অসাম্প্রদায়িক , উপার ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকরার নীতি নির্ধারণ করি , কারণ উপযুক্ত দিক নির্দেশনা ও সিকদর্শন ছাড়া সঠিক কর্মপন্থা গ্রহণ করা যায় না তবে এখানে একটা কথা না বললে বিষয়টি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কতকগুলি উপকমিটি গঠন করে , মধ্যে শিক্ষা উপকমিটিও রয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল মানুষের মৌলিক চাহিদা ও করণীয় সম্পর্কে দলের নীতি নির্ধারণ করা। যেমন- শিক্ষা স্বাস্থ্য,পরিবেশ কৃষি ইত্যাদি। 

এই উপকমিটিগুলো বিভিন্ন সময়ে সেমিনার করে আলোচনা করে এবং আমাদের দলের ঘোষণাপত্র অনুযায়ী নীতিমালা কী হবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণাপন্ন তৈরী করে। সংগঠন যখন ক্ষমতায় যাবে কীভাবে দেশ পরিচালনা করবে তার একটা প্রস্তুতি নেয়। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন এবং উপকমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড . এ কে আজাদ চৌধুরী ।

অনেকগুলো সেমিনার – সিম্পোজিয়াম তাঁরা করেছেন। কাজেই রাজনৈতিক দল হিসেবে জনসেবার যে প্রস্তুতি আওয়ামী লীগ নিয়েছে তারই ফসল এই শিক্ষানীতি । 

১৯৯৬ ও ২০০৯ সালে যাঁরা কমিটির সদস্য ছিলেন তাঁদের সকলকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই । ১৯৭২ সালে ড . কুদরাত এ খুলা কমিটির অনেকেই আর ইহজগতে নেই। যাঁরা বেঁচে আছেন এবং যারা নেই সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।  

এই শিক্ষানীতির উল্লেখযোগ্য দিক হল এখানে ধর্ম বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এতে মানুষের স্বভাবজাত অনুভূতিকে যেমন গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তেমনি পার্থিব জগতে জীবন জীবিকার সুযোগ সৃষ্টিকারী শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে- যা কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মোচিত করবে। দেশ অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাবে । আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পন্ন জ্ঞান লাভ করে বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সক্ষম হব। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি বিশ্ব সভায় মাথা উঁচু করেই উদযাপন করে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের মর্যাদা দিতে পারব। এই নীতিমালা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করি।

জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু

বাংলাদেশ চিরজীবী হোক

Advertisement

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *