বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী ২০২৩

Posted on
Advertisement
Reading Time: 4 minutes

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী সম্পর্কে আপনি জানতে চান সেহেতু পূর্বে আপনাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। বাংলাদেশের জাতির পিতা বা জাতির জনক বলা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনকাল ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বলা হয়।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাএ জীবন থেকে রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।১৯৩৯ সালে মিশনারি স্কুলে পড়ার সময়  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন ১৯৪০ সালে। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বছর মেয়াদের জন্য এই ফেডারেশনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। (বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজ)  তৎকালীন কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে আইন বিষয়ে পড়ার সময় তিনি সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতি  শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঙ্গল মুসলিম লীগের যোগ দিন ১৯৪৩ সালে এবং তৎকালীন বাঙালি মুসলিম নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সান্নিধ্যে আসেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন ১৯৪৩ সালে । এরপর ভারত ও পাকিস্তান পৃথক হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান – বাংলাদেশ) ফিরে আসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগে ভর্তি হন। এ সময় জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখে ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। এই পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্যতম ছাএনেতায় পরিনত হন পূর্ব বাংলার ( বর্তমান বাংলাদেশ) । 

আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। 

  • ১৯৫৪ সালের যুক্তফন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করার পর  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়। 
  • ১৯৫৫ সালের ৫ জুন বঙ্গবন্ধু আইন পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। 
  • এরপর ১৯৫৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোয়ালিশন সরকারে যোগ দিয়ে  একযোগে  শিল্প, শ্রম, বাণিজ্য এবং গ্রামীণ সহায়তা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। 
  • ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬ সালে লাহোরে বিরোধী দলসমূহের একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে ছয় দফা দাবি পেশ করেন এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
  • ১৯৭৯ সালে ২৩ শে ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে ( বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সভার আয়োজনে লাখো জনতার এই সম্মেলনে শেখ মুজিব কে “বঙ্গবন্ধু” উপাধি প্রদান করা হয়। 
  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক আইনসভায় নিরঙ্কু সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বা জয়লাভ করে। 
  • পাকিস্তান সরকার এ সরকারকে মেনে না নিলে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় লাখো জনতার মাঝে স্বাধীনতার ডাক দেন। 
  • ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান বাহিনী বাঙালিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লে ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দেন। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে জেলে রাখা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের পর ১৯৭২ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে মুক্তি দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন। এজন্যই ১০ই জানুয়ারি কে প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৭২ সালে নতুন দেশ গঠনের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু হয়। 

১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট মধ্যরাতে বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা হত্যা করে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের। সদ্য স্বাধীনতা দেশটিতে তখন জাতির জীবনে এক অপূরনীয় ক্ষতি নিয়ে আসে এই বিপথগামী সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাকান্ড। এ কারণে পিছিয়ে যায় গণতান্ত্রিক উন্নয়নের ধারা। 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী

সম্প্রতি বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে  গত ১০ জুলাই, ২০২৩ খ্রি. তারিখের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকীতে ‘১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস-২০২৩’ যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালনে এ অধিদপ্তরের আওতাধীন সকল দপ্তর/শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে নিম্নোক্ত কর্মসূচি পালন এবং ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে পালন করতে বলা হয়েছে। সে সকল নির্দেশ সমূহ নিম্নে উপস্থাপন করা হয়েছে:

শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ

আগামী ১৫ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি. তারিখে মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ,শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ আগষ্ট সকল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সকল দপ্তর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে  । 

প্রামানা চলচ্চিত্র প্রচারঃ

জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারগণ জেলা তথ্য অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে পোস্টার সংগ্রহপূর্বক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহে প্রচারের ব্যবস্থা করবে। যাদের LED বোর্ড রয়েছে তারা LED বোর্ডের মাধ্যম বঙ্গবন্ধুর উপর নির্মিত প্রামানা চলচ্চিত্র প্রচারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ব্যানার স্থাপন

  • সকল দপ্তর/শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দৃশ্যমান স্থানে জাতীয় শোক দিবসের ভাবগাম্ভীর্য অক্ষুন্ন রেখে ব্যানার স্থাপন করতে হবে। 
  • ব্যানারসমূহ পুরো আগস্ট মাস জুড়ে প্রদর্শন করতে হবে। 
  • বিবর্ণ, ছেঁড়া ব্যানার ব্যবহার করা যাবে না। ব্যানার বিবর্ণ হলে প্রয়োজনে পুনঃস্থাপন করতে হবে। 
  • পোস্টার এবং ব্যানারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যতিত অন্য ছবি ব্যবহার করা যাবে না।  

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মসূচি

  • জাতীয় কর্মসূচির আলোকে দপ্তর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর সকল দপ্তর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে  বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে হবে, যেমন আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ, রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্র প্রদর্শনী এবং দোয়া মাহফিল/উপাসনার আয়োজন করতে হবে। 
  • শিক্ষার্থীদের বয়সভিত্তিক গ্রুপে বিভক্ত করে বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে পরবর্তীতে পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করবে।
  • মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ,শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর সকল দপ্তর/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের সুবিধাজনক সময়ে আলোচনা সভার আয়োজন করবে।
  • মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ,শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সকল দপ্তর/শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী আগামী ০১ আগস্ট ২০২৩ থেকে আগস্ট মাসের শেষ তারিখ পর্যন্ত নির্দেশনা অনুযায়ী কালো ব্যাজ সঠিকভাবে ধারণ করবেন।
  • সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক বক্তৃতার আয়োজন করতে হবে।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে 

  • জাতীয় কর্মসূচির আলোকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য জেলা প্রশাসন/উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত সকল কর্মসূচিতে জেলা ও উপজেলায় কর্মরত এ অধিদপ্তরের আওতাধীন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকবেন।
  • বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’, ‘আমার দেখা নয়া চীন ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কর্তৃক শিশুদের জন্য প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক সকল গ্রন্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক ক্রয় ও পাঠের ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান, কৃতী শিক্ষার্থীদের উপহার হিসেবে প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। 

আশা করি আপনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এখানে পালনীয় সকল নির্দেশনা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ,শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নোটিশ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

Advertisement

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *