সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা ২০২৩ ও পেনশন আইন ২০২৩

Posted on
Advertisement
Reading Time: 5 minutes

 সার্বজনীন পেনশন সুবিধা নিয়ে আজকের আমাদের আলোচনা।  বাংলাদেশ সরকার নতুন একটি পেনশন ভাতা শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন যা শুধুমাত্র সরকারি চাকরিতে সীমাবদ্ধ নয় (তবে এ পেনশন ব্যবস্থায় সরকারি চাকরিজীবি অন্ন্তভুক্ত নন) বরং এই পেনশন ব্যবস্থায় বাংলাদেশের সকল নাগরিক অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। বাংলাদেশে অনেক নাগরিক রয়েছে যাদের কোন সঞ্চয়ী একাউন্ট নেই। সে সকল নাগরিকদের সঞ্চয় পেনশন ব্যবস্থা চালু করা পেলু কযে সকল ব্যক্তির ১৮ বছর বয়স থেকে ৫০ বছর তারা এই সার্বজনীন পেনশন ভাতায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ৬০ বছর বয়স হবার পর সার্বজনীন পেনশন সুবিধা পাবেন নাগরিক।

2023 সার্বজনীন পেনশন 

সার্বজনীন পেনশন  একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ব্যবস্থা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী আমাদের দেশে সরকারি চাকরি করেন ১৪ লাখের বেশি যাদের বয়স ১৮ থেকে ৫০ বছর তারা তাদের চাকরির বয়স শেষ হবার পরে পেনশন পেয়ে থাকেন। আমাদের দেশে আট কোটির বেশির মানুষ রয়েছেন যাদের বয়স ১৮ বছর থেকে ৫০ বছরেরে মধ্যে অন্তর্ভুক্ত যারা যার ১৪ লক্ষ মানুষ বাদে সবাই ব্যবসা,বেসরকারি চাকরি ও ইত্যাদি কাজ করে থাকেন। আমাদের দেশে ৬০ বছর বয়সের সরকারিজীবি মানুষেরা তাদের চাকরির বয়স শেষে পেনশন পেয়ে থাকেন কিন্তু বেসরকারি ও ব্যবসা ও অন্য পেশার ব্যকৃতির জন্য পেনশন ব্যবস্থা নেই। আমাদের দেশে ৬০ বছরের বৃদ্ধ মানুষেরা ভাতা পেয়ে থাকেন কিন্তু অনেকে রয়েছেন যারা বৃদ্ধ তারা এ ভাতার অন্তর্ভুক্ত নয়। সার্বজনীন পেনশন সুবিধা চালু হলে দেশের ৮ কোটি বেশি ব্যক্তি  এ সুবিধার অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন ও তাদের ভবিষ্যৎ বৃদ্ধ বয়সে চিন্তা কম করতে হবে।

সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা ২০২৩

দেশেরসার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা 

সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা মূলত চারটি ধাপে ভাগ করা হয়েছে। এই চারটি ধাপে আমাদের দেশের চার শ্রেণীর মানুষ এই সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় যোগদান করতে পারবেন। তথা:

  • বেসরকারি খাতের চাকরিজীবি
  • প্রবাসী বাংলাদেশি 
  • অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী 
  • অস্বচ্ছল ব্যক্তি 

নিচে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার বিস্তারিত উপস্থাপন করা হলো:

(১) বেসরকারি খাতের চাকরিজীবী : সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় এ খাতের অধীনে যারা বেসরকারি খাতে চাকরি করেন তারা মাসে এক হাজার টাকা থেকে ৫০০০ টাকা সঞ্চয় করে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন এবং বৃদ্ধ বয়সে চিন্তা মুক্ত থাকতে পারবেন সার্বজনীন পেনশন সুবিধা পেয়ে।  

(২) প্রবাসী বাংলাদেশি: সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা যে সকল প্রবাসীরা এখানে টাকা সঞ্চয় করে রাখতে চান  ও ভবিষ্যৎ  সুবিধা নিশ্চিত করতে চান। তারা মাসে ৫০০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন  সার্বজনীন পেনশন তহবিলে। 

(৩) অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী: অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী বলতে বুঝায় রিক্সাওয়ালা,হকার, গৃহস্থালির কাজ করে এমন মিস্ত্রি  ইত্যাদি। তারা মাসে মাত্র ৫০০ টাকা সঞ্চয় করে এ খাতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। তাদের যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে সে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত এই সার্বজনীন পেনশন তহবিলে সঞ্চয় করতে পারবেন।  

(৪) অস্বচ্ছল ব্যক্তি: আমাদের দেশে অনেক অসচ্ছল পরিবার রয়েছে যা সঞ্চয় করতে জানেন না। আবার খুব কমই মানুষ আছে যারা দরিদ্র সীমার নিচে রয়েছেন। এ সকল ব্যক্তি যারা অসচ্ছল, তারা চাইলেই সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার তহবিলে মাসে মাত্র ৫০০ টাকা সঞ্চয় করে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।  

সার্বজনীন পেনশন সুবিধা

জীবন চক্রে চক্রে মানুষ বৃদ্ধ হয়। আর আমাদের কেউ বৃদ্ধ হতে হবে। বর্তমান সময়ে বৃদ্ধ বয়সে আমরা কি করব এবং কিভাবে বেঁচে থাকবো এই নিয়ে আমরা চিন্তা করি। এ সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ সরকার সার্বজনীন পেনশন নামে একটি স্কিম শুরু করতে যাচ্ছে। সার্বজনীন পেনশন থেকে যে সকল সুবিধা আমরা পেয়ে থাকবো সে সকল সুবিধা নিচে উপস্থাপন করা হলো:

  • যদি কোন ব্যক্তি ৫০ বছর বয়সে সার্বজনীন পেনশন এর অন্তর্ভুক্ত হন তিনি ৫০০ টাকা করে ১০ বছর দেবার পর তিনি পেনশন পাওয়া শুরু করবেন। এক্ষেত্রে তিনি যদি ৬০ বছর বয়সে সারাদিন পেনশন ভাতা অন্তর্ভুক্ত হন ৫০০ টাকা করে তাহলে তিনি ৭০ বছর বয়সে পেনশন পাবেন।
  • যে সকল ব্যক্তি অস্বচ্ছল রয়েছেন। তাদের চাঁদায় পঞ্চাশ শতাংশ সহায়তা করবে সরকার। 
  • পেনশন দাতা বা পেনশন গ্রহীতা চাইলে যেকোনো সময় স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন।
  • সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় আপনাকে অন্তর্ভুক্ত হতে হলে আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে এবং আপনার বয়স হতে হবে ১৮ বছর থেকে ৫০ বছরের মধ্য। 
  • যদি কোন ব্যক্তি ধারাবাহিকভাবে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় ১০ বছরের যাবৎ টাকা সঞ্চয় করে আসেন। তাহলে তিনি পেনশন পাবার উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবেন। 
  • পেনশনের জন্য নির্ধারিত ৬০ বছর পূর্ণ হলেই সার্বজনীন পেনশন তহবিলে জমাকৃত নির্ধারিত টাকা ও লাভাংশ তিনি প্রতিমাসে মাসে পেনশন  পাবেন নির্ধারিত হারে।
  • নির্ধারিত দশ বছর টাকা জমা দেওয়ার আগেই যদি নিবন্ধিত চাঁদা প্রদান করে যদি ব্যক্তি মারা যায়, তাহলে তার নমিনি মুনাফা সহ মূল অর্থ ফেরত পাবেন নিদিষ্ট শর্তাবলী অনুযায়ী।  
  • বাংলাদেশে অনেক নাগরিক যারা বিদেশে কর্মরত রয়েছে আমরা যাদের প্রবাসী বলে থাকি। তারা সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন । 
  • জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী যাদের বয়স ১৮ থেকে ৫০ তারা সবাই সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। 
  • সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার প্রতিটি নাগরিককে আলাদা করে একটি হিসাব তালিকা থাকবে। যেখানে তার পেশা পরিবর্তন হলেও পেনশন হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে। 
  • সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সর্বনিম্ন চাঁদার হার  নির্ধারিত থাকবে। বিদেশে কর্মরত প্রবাসীরা এৈমাসিক ভিত্তিতে সার্বজনীন পেনশন তহবিলে  চাঁদা প্রদান করতে পারবেন।
  • সার্বজনীন পেনশন তহবিলে চাঁদা প্রদানকারী পেনশনধারী ব্যক্তিরা তাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পেনশন পাবেন অর্থাৎ আজীবন পেনশন পাবেন। 

এছাড়াও সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় আরো কিছু অনেক সুবিধা রয়েছে। বৃদ্ধ বয়সে মানুষ সাধারণত অসুস্থ হয়ে পড়ে, অনেক পরিবার আছে এই অসুস্থ মানুষের ওপর নির্ভর করে তাদের পরিবার চলে। সেহেতু মধ্যবিত্ত ও অস্বচ্ছল পরিবারের জন্য সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা একটি উত্তম পরিকল্পনা হতে পারে । 

সার্বজনীন পেনশন আইন ২০২৩ এ কি আছে?

১। (১) সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন ও প্রয়োগ।– এই আইন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২২ নামে অভিহিত হইবে।

(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।

২। সংজ্ঞাসমূহ।– (১) বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কোন কিছু না থাকিলে, এই আইনে⎯

(ক) “অর্থ বৎসর” অর্থ জুলাই মাসের প্রথম দিবসে যে বৎসরের আরম্ভ;

(খ) “গভর্নিং বোর্ড” অর্থ ধারা ৭ এর অধীন গঠিত কোন বোর্ড;

(গ) “কর্তৃপক্ষ” অর্থ ধারা ৩ এর উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ;

(ঘ) “নির্বাহী চেয়ারম্যান” অর্থ ধারা ৫ এর উপ-ধারা (২) এর অধীন নিযুক্ত জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান;

(ঙ) “ব্যক্তি পেনশন হিসাব“ অর্থ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার শর্তাবলি অনুসরণে চুক্তি অনুযায়ী চালু একজন চাঁদাদাতার হিসাব;

(চ) “সদস্য“ অর্থ কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্য;

(ছ) “পেনশন তহবিল” অর্থ ধারা ১৫ এ বর্ণিত তহবিলকে বুঝাবে;

(জ) “তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটি” অর্থ ধারা ২২ এর উপধারা (১) অনুযায়ী গঠিত কমিটি;

(ঝ) “পেনশনের সন্মুখ অফিস“ অর্থ পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণকারী সদস্যগণের মাসিক চাঁদা সংগ্রহ এবং সংগৃহিত চাঁদা পেনশন তহবিলে জমা করণের কাজে নিয়োজিত অফিস;

(ঞ) “নির্ধারিত“ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি দ্বারা নির্ধারিত, তবে বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত সরকার কর্তৃক লিখিত আদেশ দ্বারা নির্ধারিত;

(ট) “প্রবিধান“ অর্থ এই আইনের অধীনে সরকারের অনুমোদনক্রমে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত প্রবিধান;

(ঠ) “স্কিম” অর্থ এই আইনের অধীনে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত সর্বজনীন পেনশন স্কিম;

ড) “চাঁদাদাতা” বলিতে একজন ব্যক্তিকে বুঝাইবে যিনি পেনশন স্কীমে চাঁদা প্রদান করিবেন;

(ঢ) “তফসিলি ব্যাংক“ অর্থ Bangladesh Bank Order, 1972 (P. O. No. 127 of 1972) এর Article 2(j)-তে সংজ্ঞায়িত তফসিলি ব্যাংক;

(ণ) “দুস্থ চাঁদাদাতা” অর্থ পেনশন স্কীমে চাঁদা প্রদানকারি কোনো চাঁদাদাতা, যিনি শারীরিক বা মানসিক কারণে অসমর্থ হইয়া চাঁদা প্রদানের সক্ষমতা হারিয়েছেন;

(ত) “সরকার” অর্থ এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগকে বুঝাইবে;

(থ) “বিধিমালা“ অর্থ এই আইনের অধীন সরকার কর্তৃক প্রণীত বিধিমালা; এবং

(দ) “পেনশনার” অর্থ এই আইনের ধারা ১৩ এর অধীন দফা

(ঙ) এর বিধান অনুযায়ী পেনশনপ্রাপ্ত ব্যক্তি।

(২) যে সকল শব্দ এবং অভিব্যক্তি এই আইনে ব্যবহৃত হইয়াছে, কিন্তু এই ধারার অধীনে সংজ্ঞায়িত হয়নি, সেই সকল শব্দ বা অভিব্যক্তি, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, দেশে বিদ্যমান সংশ্লিষ্ট আইনে যে অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে, তাহা এই আইনের ক্ষেত্রেও সমভাবে ব্যবহৃত হইবে।

শেষকথা

আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে, সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর আপনি সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় নিবন্ধন করবেন আপনার ভবিষ্যৎ চিন্তা করেন। তাহলে আমরা বলতে পারি যে আপনি সঠিক পরামর্শ নিয়েছেন সার্বজনীন পেনশন সুবিধা লাভের জন্য । আপনি যখন সার্বজনীন পেনশন তহবিলে চাঁদা প্রদান করার জন্য নিবন্ধন করবেন আপনার কাছে আমাদের পরামর্শ যে, আপনি সকল শর্তাবলীসমূহ ভালো করে পড়ে নিবেন। সার্বজনীন পেনশন সুবিধা পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ! পোস্টটি ভালো লাগলে আপনি আপনার নিকটতম বন্ধুদের কাছে বা আত্মীয়ের কাছে পোস্টটি শেয়ার করুন।

Advertisement

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *