প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হচ্ছেনা- ডিপিই

Posted on
Advertisement
Reading Time: 3 minutes

প্রথম ধাপের সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলতি বছরেই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বিভাগওয়ারী তিন ধাপে হওয়ার কথা ছিল এই পরীক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র না মেলায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছেনা । দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই পরীক্ষা সম্পন্ন করতে চেয়েছিল ডিপিই। কিন্তু আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগসহ পরীক্ষা সম্পন্ন করার অর্থ না মেলায় এখন তা প্রায় অসম্ভব।

অর্থ মন্ত্রণালয় চায় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে যাতে লোকবল নিয়োগ দেয়া না হয়। শিক্ষক নিয়োগের প্রথম ধাপের এই পরীক্ষা সেপ্টেম্বরের শেষ ধাপে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে টেকনিক্যাল সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সঙ্গে বৈঠক করে ডিপিই।

সাড়ে ৭ হাজার পদে শিক্ষক নিয়োগের কথা মাথায় রেখে শুরু হয় কার্যক্রম। সেই সঙ্গে বলা হয়- শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ করে তা যুক্ত হবে শিক্ষক তালিকায়। সবশেষ তথ্যানুযায়ী বর্তমানে সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের ৮ হাজার ৬৮টি পদ শূন্য রয়েছে।

প্রতিনিয়ত অবসরজনিত কারণে শূন্য হচ্ছে পদ। চলতি বছরে এই পরীক্ষা নেয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। কারণ পরীক্ষা আয়োজনের জন্য আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিযুক্তকরণের অর্থ বরাদ্দ দিতে চায় না অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের প্রার্থীদের পরীক্ষা আয়োজন করার কথা ছিল। পরীক্ষার জন্য টেকনিক্যাল সহায়তার জন্য বুয়েটের সঙ্গে বৈঠকে বসলেও আনুষ্ঠানিক চুক্তি করতে পারছে না ডিপিই।

এই পরীক্ষা আয়োজনের জন্য নানা খাতে খরচ বহন করতে হয় সরকারকে। এরমধ্যে রয়েছে টেকনিক্যাল সহায়তা ফি, কেন্দ্র ফি, পরীক্ষা পর্যবেক্ষক ফি, নিরাপত্তা, পরিবহন, খাদ্য ইত্যাদি। আবার সহযোগিতার জন্য তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের কাজে নিয়োজিত করতে হয়।

ডিপিই একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সুন্দরভাবে চালু রাখার জন্য এই বছরের শুরুতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা চাইছিলেন এই বিদ্যালয়গুলোতে পুরোপুরি ঘাটতি পূরণ করতে। গেল কয়েক বছরের আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে।

এই সময় প্রাথমিক শিক্ষার প্রধান ঘাটতি হিসেবে শিক্ষক ঘাটতিকে চিহ্নিত করে। এরপর শিক্ষক নিয়োগের কাজ হাতে নেয় প্রশাসন। পূর্বের তুলনায় সমালোচনাহীনভাবে পরীক্ষা ও নিয়োগ প্রক্রিয়া হওয়ায় সন্তুষ্ট সকলেই। এই নিয়োগ চালু থাকা অবস্থাতেই ফের শূন্যপদ পূরণের উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। এরই মাঝে পুনরায় পরীক্ষা আয়োজনকেও স্বাগত জানানো হয়। কিন্তু এই পরীক্ষা আয়োজনের খরচ নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। তারা আরও বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় নির্বাচনের আগে এই অর্থ খরচ করতে চায় না। ফলে নির্বাচনের আগে এই পরীক্ষা আয়োজনের আর কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না।

ডিপিই’র পলিসি অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের গবেষণা কর্মকর্তা (নিয়োগ) এস. এম. মাহবুব আলম বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় কিছু বিষয়ে জানতে চায়। আমরা তার জবাব দিয়েছি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটা নির্দেশনা আছে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ দেয়া যাবে না। এই নিষেধাজ্ঞা শিথিলের জন্য আমরা তাদের বলেছি। তবে আবেদনে অর্থের বিষয়টি উল্লেখই নাই।

তিনি আরও বলেন, পরীক্ষা আয়োজনের খরচ একেক সময় একেক রকম হয়। সাধারণত একটা প্রার্থীপ্রতি ২০০ থেকে ২০৫ টাকা খরচ হয়।

চলতি বছরের শুরুতে দেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ নিয়োগ দেয়া হয়। প্রায় সাড়ে ৩৭ হাজার শিক্ষক যোগদান করেন। এরপরও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শূন্য ছিল শিক্ষক পদ। এই ঘাটতি পূরণে ২৮শে ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এ ধাপে আবেদনের শেষ সময় ছিল ২৪শে মার্চ।

প্রথম ধাপে আবেদন জমা পড়ে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৭০০টি। দ্বিতীয় ধাপে ২৩শে মার্চ ময়মনসিংহ, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আবেদনের শেষ সময় ছিল ১৪ই এপ্রিল। দ্বিতীয় ধাপে আবেদন জমা পড়ে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৩৮টি। এরপর ১৮ই জুন তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এ ধাপে আবেদন শেষ হয় গত ৮ই জুলাই। তৃতীয় ধাপে আবেদন জমা পড়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজারের কিছু বেশি।

ডিপিই সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষা আয়োজনের খরচ নানা বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। তবে আনুমানিক খরচ হিসাব করলে প্রত্যেক পরীক্ষার্থী প্রতি ২০০ থেকে ২০৫ টাকা খরচ হয়। ২০০ টাকা করে হিসাব করলে প্রথম ধাপের রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের পরীক্ষা আয়োজনের জন্য খরচ হবে প্রায় ৭ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। দ্বিতীয় ধাপের ময়মনসিংহ, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের পরীক্ষায় সরকারের খরচ হবে ৮ কোটি ৭৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬০০ টাকা প্রায়।

আর তৃতীয় ও শেষ ধাপের পরীক্ষায় খরচ হবে ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রায়। মোট খরচ ২২ কোটি ৮০ লাখ ২৭ হাজার ৬০০ টাকার মতো। আর একই সময়ে আবেদনকারীদের কাছে ফর্মের মূল্য রাখা হয় ২২০ টাকা। ২০০ টাকা আবেদন ফি ও ২০ টাকা রাখা হয় টেলিটকের সার্ভিস চার্জ।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, পরীক্ষার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন। অনুমোদন না মেলায় এই নিয়োগ পরীক্ষা নিতে সময় লাগবে।

সূত্রঃ দৈনিক মানবজমিন

Advertisement

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *