ডেঙ্গু রোগ মশা দ্বারা সৃষ্ট একটি গুরুতর জ্বর। ডেঙ্গু মশাদের আরেক নাম ‘এডিস’। এডিস মশা কামড়ালে আপনি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হবেন। আজ আমরা ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, ডেঙ্গু থেকে পরিবারকে রক্ষা করতে আপনার যা জানা দরকার তাও বলব। এছাড়া ডেঙ্গু জ্বর হলে কি করতে হবে? ডেঙ্গু রোগের জীবাণুর নাম কি? ডেঙ্গু টেস্ট কত প্রকার? শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, ডেঙ্গু হলে কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় কিনা? ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে? এসব বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
এক নজরে ডেঙ্গু রোগ
- এটি একটি মশাবাহিত ভাইরাল সংক্রমণ যা স্ত্রী এডিস ইজিপ্টি মশার মাধ্যমে ছড়ায়।
- এডিস ইজিপ্টাই রোগের প্রধান কারণ নয়, শুধুমাত্র সংক্রমণের একটি মাধ্যম।
- ডেঙ্গু জ্বরের উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা পেলে মৃত্যুহার কমে যায়।
- প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হল মশার কামড় এড়ানো।
ডেঙ্গু কি?
ডেঙ্গু একটি ভাইরাল সংক্রমণ যা মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে। সাধারণত, বিশেষ করে দরিদ্র এবং গ্রামীণ এলাকায় ডেঙ্গু রোগের পরিমাণ বেশি ।
ডেঙ্গু রোগের জীবাণুর নাম কি?
ডেঙ্গু রোগের জীবাণুর নাম হল ডেঙ্গু ভাইরাস (Dengue Virus)। এটি ফ্ল্যাভিভাইরিডি পরিবারের একটি আরএনএ ভাইরাস। ডেঙ্গু ভাইরাস পাঁচ ধরনের হয়ে থাকে, যা হলো DENV-1, DENV-2, DENV-3, DENV-4 এবং DENV-5।
ডেঙ্গু জ্বরের কারণ
ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ভিন্ন সেরোটাইপ রয়েছে: (ডেন -1, ডেন -2, ডেন -3 এবং ডেন -4)। স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাই মশার মাধ্যমে এই ধরনের যেকোনো একটিতে সংক্রমণ হলে ডেঙ্গু জ্বর হয়। ভাইরাসটি এডিস অ্যালবোপিকটাস (স্টেগোমিয়া অ্যালবোপিক্টা) মশার মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।
ডেঙ্গু সংক্রমণ পদ্ধতি
ডেঙ্গু জ্বর এডিস ইজিপ্টাই মশার কামড়ের মাধ্যমে একজন থেকে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রমিত হয়। একটি সুস্থ মশা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত খাওয়ার সময় সংক্রমিত হয়। তারপর এটি সুস্থ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ করে ৷ সংক্রমিত ব্যক্তিরা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে 4-5 দিন (7 দিন পর্যন্ত) মশার মাধ্যমে এই রোগটি অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ করতে পারে।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
ডেঙ্গু হলে নানা রকম উপসর্গ প্রকাশ পায়। ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের রক্তে প্রবেশ করে এবং লিম্ফ নোড এবং যকৃতে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটি লিম্ফ নোড এবং যকৃতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি রক্তনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং রক্তক্ষরণের কারণ হয়। এর মধ্য থেকে ডেঙ্গুর গুরুতর উপসর্গ হলো –
- পেট ব্যথা,
- ক্রমাগত বমি হওয়া,
- মাড়ি ও নাক দিয়ে রক্ত পড়া,
- প্রস্রাবে রক্ত আসা বা মলে রক্ত আসা।
- ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ।
- দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস নেয়া।
- ফ্যাকাশে এবং ঠান্ডা ত্বক।
- ক্লান্তি,
- বমি বমি ভাব,
- বমি করা।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণগুলি প্রায়শই 2 থেকে 7 দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সংক্রামক মশা কামড়ানোর 4-10 দিন পরে লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে শুরু করে।
Read More: Dengue Fever Paragraph For HSC Exam
ডেঙ্গু টেস্ট কত প্রকার?
ডেঙ্গু ভাইরাসের জন্য তিন ধরনের পরীক্ষা করা হয়-
- রক্ত পরীক্ষা: রক্ত পরীক্ষা হল ডেঙ্গু রোগের সবচেয়ে সাধারণ পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় রক্তের নমুনা থেকে ডেঙ্গু ভাইরাসের অ্যান্টিবডি বা ভাইরাসের জেনেটিক উপাদানগুলি শনাক্ত করা হয়।
- ইমিউনোসিটোমিট্রি পরীক্ষা: ইমিউনোসিটোমিট্রি পরীক্ষা হল এক ধরনের রক্ত পরীক্ষা যা ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার পরিমাপ করে।
- এন্টিজেন পরীক্ষা: এন্টিজেন পরীক্ষা ডেঙ্গু ভাইরাসের অ্যান্টিজেনগুলি শনাক্ত করে।
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিত্সা করার জন্য কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ নেই, তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ডেঙ্গু রোগে সংক্রামিত হলে, রোগীদের নিচের নিয়ম মেনে চলা উচিৎ :
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
- পর্যাপ্ত তরল পানীয় পান করুন।
- ব্যথানাশক ওষুধ নিন। যেমনঃ প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসিটামিনোফেন ডেঙ্গু রোগের ব্যথা, মাথাব্যথা এবং জয়েন্টে ব্যথা উপশম করতে পারে।
- শিশুদেরকে অ্যাসপিরিন দেওয়া উচিত নয়।
- ডেঙ্গু রোগের কারণে রক্তক্ষরণ হতে পারে। তাই, রক্তক্ষরণ বন্ধের ওষুধ খেতে পারেন।
- রোগের বিস্তার রোধ করতে মশার কামড় এড়িয়ে চলুন।
ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া প্রতিকার
ডেঙ্গু রোগের প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:
- মশার কামড় থেকে বাঁচুন।
- মশার বিস্তার রোধ করুন।
- ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
ডেঙ্গু একটি গুরুতর রোগ তাই একজন ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা করা উচিত। যদি আপনি ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ বুঝতে পারেন, তাহলে দয়া করে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি করতে হবে?
উত্তরঃ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ডেঙ্গু হলে কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়?
উত্তরঃ সবার ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। অনেকে গুরুতর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় এবং তাদের হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
ডেঙ্গু টাইপ ২ কি?
উত্তরঃ ডেঙ্গু টাইপ ২ হল ডেঙ্গু ভাইরাসের পাঁচটি ধরণের মধ্যে একটি।
ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ?
উত্তরঃ ডেঙ্গু জ্বর ছোঁয়াচে নয়। অর্থাৎ, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে ছড়ায় না।
কোন ডেঙ্গু রোগ বেশি মারাত্মক?
ডেঙ্গু জ্বরের মারাত্মক রূপ, যাকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারও বলা হয়, গুরুতর রক্তপাত, রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া (শক) এবং মৃত্যু ঘটাতে পারে